ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

বাজারে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষগুলো

নিত্যপণ্যের দাম শুধু বাড়ছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক :: শীতকালীন সবজির বাজারেও যেন স্বস্তি নেই। ৪০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। পেয়াজ, সয়াবিন তৈলের দাম স্থিতিশীল থাকলেও ময়দা, আটা, চিনি, রসুন, আধা থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়তি। মাছের বাজারেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। তেলাপিয়া, গরীবের পাঙ্গাস, চাষকৃত রুই, মৃগেল, কাতাল, কার্প ও সাগরের পোয়া, ফাইস্যা কেজিতে ১৮০-২৫০ টাকা।
গতকাল শনিবার শহরের বাহারছড়া বাজার, কানাইয়া বাজার, কলাতলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন আলু ৪০-৫০ টাকা। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, টমেটো ১০০-১২০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, পুঁতা বেগুন ৬০ টাকা, তিতকরলা ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, মুলা ৩০-৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, দেড়শ ৭০ টাকা, ললিতা আলু ৩০ টাকা, দেশি আলু ৬০ টাকা। কাঁচা মরিচের দাম হয়েছে ৫০-৬০ টাকা।
বাহাড়ছড়া বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ লোকমান জানান, গত এক সপ্তাহে কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। আড়ৎদার থেকে কিনে এনে কেজিতে ৩-৫ টাকার ব্যবসা হয়।

আরেক সবজি বিক্রেতা সেলিম বলেন, নতুন আলুর দাম কমে ৪০ টাকা। অন্যদিকে মুলার দাম ৪০ টাকা। বাঁধাকপি ৪০ টাকা ফুলকপি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এদিকে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে, ৫০০ গ্রাম ওজনের ৭০০ টাকা, এর উপরে হলে ৯০০-১১০০ টাকা। টেংড়া ৫৫০ টাকা, লাইট্যা ১৫০-১৭০ টাকা, সুরমা ৫৫০ টাকা, তাইল্যা ৫০০ টাকা, বাটা ৫০০-৬০০ টাকা, সাগরের কোরাল (কাটা) কেজি ১২০০ টাকা, ছোট কোরাল ৬০০ টাকা, মিঠাপানির কোরাল ৬০০-৬৫০ টাকা, পাবদামাছ ৪৫০ টাকা। চিংড়ি বাগদা ১০০০ টাকা। এদিকে গরুর মাংস হাড়সহ ৭০০ টাকা এবং হাড় ছাড় ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ছাগলের মাংস ১০০০ টাকা।
শহরের নতুন বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি। চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ছেলেদের স্কুলের খরচ, পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবেনা।
টমটম চালক শহিদ বলেন, দৈনিক ৫০০- ৭০০ টাকা উপার্জন করতে পারি। মাঝেমধ্যে শারীরিক অসুস্থতার জন্য বের হতে পারিনা। যা পায় তা মালিকের গাড়ি ভাড়া, লাইসেন্স ভাড়া গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে কিছু থাকেনা। কিভাবে জীবন পার করছি আল্লাহ জানে। কোনো কোনো দিন বেশি হয়। দূরের ভাড়া পেলে কিছু থাকে। কিন্তু বাজারে গিয়ে আর হিসাব মেলাতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘যে ভাবে নিত্যপন্যের দাম বাড়ছে তাতে এ আয়ে কোন মতেই আর সংসার চলে না। বেঁচে থাকাই এখন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একই কথা বললেন, কানাইয়া বাজারে বাজার করতে আসা দোকান ব্যবসায়ী মোজাম্মেল। তিনি বড় বাজারে দোকানদারি করেন। এক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে আসলে সবকিছু নিতে পারিনা। টাকা শেষ হয়ে যায়। সবকিছুর দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। এ অবস্থা থাকলে সামনের দিনগুলোতে না খেয়ে মরতে হবে।

এছাড়া মুদির দোকানে পণ্যের মধ্যে ভালোমানের মিনিকেট চাল ৬৪ থেকে ৬৭ টাকা, মসুর ডাল মোটা দানার ১২০ টাকা, ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। ভোজ্য তেল খোলা প্রতি লিটার ১৭০ টাকা, বোতলজাত এক লিটার ১৯৫-২০৫ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলেন, চট্টগ্রাম শহরের থেকে পণ্য লোড করে পরিবহন খরচ যোগ করলে বস্তা প্রতি ২০-৫০ টাকার ব্যবসা হয়।

শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার (মাছ বাজার রোড) বড় বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কথা বলে হলে তারা জানান, নিত্যেপণ্য’র দাম কিছুটা বেড়েছে। কিছু পন্যের ক্ষেত্রে দাম একটু বাড়তি।

মসল্লা আইটেম মধ্যে ইন্ডিয়ান এলাচি কেজিপ্রতি ১৩৫০ টাকা থেকে শুরু ১৯০০ টাকা,লবঙ্গ ১১০০ -১৩০০ টাকা, দারুচিনি ৪০০ টাকা, চিকন জিরা ৪২০ টাকা, মিষ্টি জিরা ৩৫০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, এক দোকান থেকে অন্য দোকানের দামের মাঝেও পার্থক্য আছে।

বড় বাজারের শহিদ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে সবকিছুর দাম স্থিতিশীল। তার মধ্যে কিছু পান্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। ময়দা, মটর, দুধ পাউডার, কনডেন্স মিল্ক ও নুডলস। ময়দা প্যাকেটজাত ৭৫ টাকা, খোলা ৬০ টাকা, আটা ৫৭ টাকা এবং লবনও দুই টাকা বেড়ে ৩৫ টাকা। এদিকে পাউডার দুধের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সব ব্যান্ডের গুঁড়ো দুধ দাম হাজার ছুঁই ছুঁই। এছাড়া নুডলস, সেমাই, সুজি,র দামও বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, গত এ সপ্তাহ ধরে কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে। শুকনা মরিচের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। সিলেটের চিকন মরিচ কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা আগে ছিলো ২৫০ টাকা, দেশি মিষ্টি মরিচ ৪২০ যা আগে ছিলো ৩২০ টাকা। সরবরাহ কম থাকলে স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক জিনিসের দাম বাড়ে।

চাউল বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সভাপতি এইচ এম জসিম উৃদ্দিন বলেন, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, চাপাইনবয়াবগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে আমরা চাউল আমদানি করি। পরিবহন খরচ আগের চাইতে দ্বিগুণ বেড়েছে। একজ্য আগের দাম এখনের দামের পার্থক্য থাকবে। তিনি বলেন, গত দুই মাস ধরে চালের দাম ওঠানামা করছে। সামনে নতুন চাল বাজারে আসলে দাম আরও বাড়বে। বস্তাপ্রতি ২’শ থেকে ৩’শ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।

পাঠকের মতামত: